Logo

টাকা দিচ্ছে না বাফুফে, শুরু হচ্ছে না জেলার লিগ

সাবেক তারকা ফুটবলার ইকবাল হোসেন ২২ জানুয়ারি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্তত ১০ জেলায় লিগ শুরু করতে চাই।’ সেই তারিখের পর চলে গেছে সাড়ে ৪ মাস। কোথাও মাঠে গড়ায়নি কোনো লিগ।

ছবি: সংগৃহীত

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নতুন কমিটি দায়িত্ব নিয়েছে ৮ মাস হলো। লম্বা এই সময়েও বাফুফে কোনো জেলায় লিগ শুরু করতে পারেনি। জেলা লিগ কমিটির চেয়ারম্যান, সাবেক তারকা ফুটবলার ইকবাল হোসেন ২২ জানুয়ারি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্তত ১০ জেলায় লিগ শুরু করতে চাই।’ সেই তারিখের পর চলে গেছে সাড়ে ৪ মাস। কোথাও মাঠে গড়ায়নি কোনো লিগ।

কেন জেলা লিগ শুরু হচ্ছে না? এই প্রশ্নের উত্তর একটাই, ‘অর্থ সংকট। বাফুফে থেকে জেলাগুলোকে বলা হয়েছিল লিগের বাজেট তৈরি করে জানাতে। বাফুফে থেকে আর্থিক সাপোর্ট দেওয়ার প্রতিশ্রতিও দেওয়া হয়েছিল। দেশের ফুটবলের অভিভাবক প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল বাফুফে-ডিএফএ মিলেমিশেই লিগ শুরু করবে। বাফুফে প্রতিশ্রুত অর্থ দিলে তো জেলাগুলো বাকি টাকা যোগাড় করবে তাই না? বাফুফে টাকাও দিচ্ছে না, জেলাগুলোর কর্মকর্তারাও হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন।’

লিগ শুরুর জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ জেলাকে বাছাই করেছিল বাফুফে। সেগুলোর মধ্যে চারটি জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোনো জেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন, কোনো জেলা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শুধু টাকা নেই বলে খেলা মাঠে নামাতে পারছে না। আবার যারা প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারাও সামনে বাড়াচ্ছে না। তাহলে বাফুফে কি করলো ৮ মাস ধরে? একটি জেলায়ও লিগ শুরু করতে পারলো না। বাফুফে কর্মকর্তারা বড় গলায়ই বলছেন এখন টাকা আসতে শুরু করছে ফুটবলে। অথচ বাফুফে এখনো অর্থ বরাদ্দ দিয়ে লিগ শুরু করতে পারেনি কোনো জেলায়।

নড়াইল জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশিকুর রহমান মিকু বাফুফে প্রতিশ্রুত অর্থ না পাওয়ায় হতাশ। ‘বাফুফে থেকে বলা হয়েছিল লিগের বাজেট, ফিকশ্চার জমা দিতে। ২-৩ বার দিয়েছি। কথা বলেছি জেলা লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের সাথে। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কবে শুরু করবো। ১৫ দিন সময় নিয়ে লিগ শুরুর তারিখ দিতে পারবো বলে জানিয়েছি। এর মধ্যে আমি ডিএফএ’র একটি সভাও করেছি। ১৫ জুলাই লিগ শুরুর একটা তারিখও নির্ধারণ করেছি। তবে ৫-৬ লাখ টাকা খরচ করে আমার একার পক্ষে লিগ চালানো সম্ভব না। বাফুফে কম-বেশি যাই দিক, দিলে বাকিটা ব্যবস্থা করে শুরু করতে পারতাম’- বলেছেন বর্ষিয়ান এই ক্রীড়া সংগঠক।

নড়াইলের জেলা লিগ নিয়মিত হয় উল্লেখ করে মিকু বলেন, ‘আমার এখানে লিগ নিয়মিতই আছে। গতবার লিগ হয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। এবারের লিগের ১২ দলও চূড়ান্ত হয়ে আছে। বাফুফে থেকে যতক্ষণ টাকা ডিএফএ’র হিসাবে না ঢুকবে ততক্ষণ আমি লিগ শুরু করবো না। কারণ, মুখের আশ্বাসে টাকার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব না। অনূর্ধ্ব-১৫ খেলা হলো। ৩০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল বাফুফে। পাইনি। আমাদের ম্যাচ ভেন্যু ঝিনাইদহে গিয়ে দলকে ৫ দিন থাকতে হয়েছে। খরচ হয়ে গেছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাফুফে তাদের প্রতিশ্রুত ৩০ হাজার টাকাও দেয়নি।’

শরিয়তপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম বলেছেন, ‘বাফুফে বলেছিল বাজেট দিতে। স্পন্সর ম্যানেজ করে দেবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। জেলা লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে বললেন, শুরু করেন দেখছি। এখন তারা স্পন্সর দিতে পারছে না। আমরা নিজেরা একটা স্পন্সর ঠিক করেছি। ৫ লাখ টাকা পাবো। ৮ ক্লাব নিয়ে ১০ জুলাই লিগ শুরু করতে যাচ্ছি।’

কিভাবে ও কোন ভেন্যুতে লিগ করতে যাচ্ছেন? আবদুস সালাম বলেছেন, ‘জেলা স্টেডিয়ামে শুরু করতে যাচ্ছি। ৮ দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবো। দুই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল খেলবে সেমিফাইনাল। তারপর ফাইনাল।’

মাদারীপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. গোলাম কবিরও বললেন তারা লিগ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত। টাকার জন্য শুরু করতে পারছেন না। ‘আমাদের দল প্রস্তুত। ২০ জুন থেকে শুরু করতে চেয়েছিলাম। বাফুফে বলেছিল ৫ লাখ টাকা দেবে। দেয়নি। তাই তারিখ দিয়েও লিগ শুরু করতে পারিনি। নতুন তারিখও দিতে পারছি না’- বলেছেন মাদারীপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

এই জেলাও ৮ দলকে নিয়ে টুর্নামেন্ট ভিত্তিক খেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিএফএ সভাপতি বলেছেন, ‘লিগ ভিত্তিক খেলা চালাতে চেয়েছিলাম। পরে সবাই আলোচনা করে দেখলাম তাতে ২৮টা ম্যাচ হয়। ক্লাবগুলো এই চাপ নিতে পারবে না। তাই দুই গ্রুপে ভাগ করে লিগ ও তারপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল আয়োজন করবো।’

মাদারীপুরে সর্বশেষ লিগ হয়েছে ২০২২-২৩ মৌসুমে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সবুজবাগ ক্রীড়া চক্র। এবারও দলটি থাকছে। অন্য ৭ দল হচ্ছে- ইয়াং স্টার ক্লাব, মাদারীপুর বয়েজ, কলেজ রোড ক্রীড়া চক্র, এসিসি চরমুগুরিয়া, মডেল ক্লাব কুলপুদ্দি, এফসি বয়েজ ও ফুটবল কোচিং সেন্টার। মাদারীপুরে প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ লিগ হয়। প্রথম বিভাগ থেকে রেলিগেশন ও দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রমোশন হয়ে থাকে লিগে।

মাগুরা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরীফ আজিজুল হাসান মোহন বললেন তারা লিগ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ‘এরই মধ্যে লিগে অংশগ্রহণের জন্য শহরে মাইকিং চলছে। ক্লাবগুলোর নিবন্ধনও শুরু হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসন থেকে ৩ মাসের জন্য স্টেডিয়ামও বরাদ্দ নিয়েছি। মৌখিকভাবে ক্লাবগুলো যে সাড়া দিয়েছে তাতে আশা করছি ১৬টি দল পাবো লিগের জন্য। আমরা দুই গ্রুপে ভাগ করেই লিগ শুরু কববো। আমাদের বাজেট ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। বাফুফে বলেছিল সহযোগিতা করবে। আমাদেরও টাকার ব্যবস্থা করতে বলেছে। তবে তারা এখনো কোনো টাকা দেয়নি। এমনকি বাফুফে অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে খেলার জন্য যে ৩০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল তাও দেয়নি। এখন আমাদের স্পন্সর সংগ্রহ করতে হবে’- বলেছেন মাগুরা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

ঘোষণা দিয়েও কেন জেলা লিগ শুরু করতে পারলেন না? জবাবে বাফুফের জেলা লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন প্রথমেই সামনে আনলেন দুটি ঈদকে। তারপর টাকা-পয়সাসহ আরো কিছু সমস্যার কথা। ইকবাল হোসেন বলেছেন, ‘আসলে এর মধ্যে দুইটা ঈদ গেলো। বিভিন্ন জেলার মাঠ নিয়েও সমস্যা ছিল। আমরা চাচ্ছি শুরু করে আবার যাতে বন্ধ করতে না হয়। আবার কিছু জেলায় কমিটি নিয়েও ঝামেলা আছে। আমাদের প্ল্যান দেওয়া আছে সব জেলায়। টাকা-পয়সারও ব্যাপার আছে। এরই মধ্যে সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় বিভাগ লিগ শুরু হয়েছে। তবে প্রথম বিভাগ কোথাও শুরু করতে পারিনি। ১০ জুলাই কিছু জেলায় লিগ শুরু করতে পাবরো বলে আশা করছি।’

বাংলাফ্লো/এসও

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0