Logo

বিএনপি নেতাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে খুন: শরীরের একাধিক স্থানে জখম

বাড্ডা হাই স্কুল সংলগ্ন একটি বাসায় ছিল তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘স্বদেশ কমিউনিকেশনের’ অফিস। এর পরের গলিতেই স্থানীয় তিন বন্ধুর সঙ্গে বসে থাকার সময় গুলিতে খুন হন সাধন।

ছবি সংগৃহীত

বাংলাফ্লো ডেস্ক

ঢাকা: একটা ফোন আসে। ফোনে কথা বলার পরই বাসা থেকে বেরিয়ে যান সাধন। এরপর আর বাসায় ফেরা হয় নি তার। গলির একটা চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় সাধনকে গুলি করে পালিয়ে যান দুই ব্যক্তি। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে হত্যার পেছনে ‘রাজনৈতিক’ কিংবা ‘ব্যবসায়িক’— কোনো কারণই এখন পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি; কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। পুলিশ বলছে, জড়িতদের কাউকে গ্রেপ্তারের আগে হত্যার কারণ ‘নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়’।

সাধনের স্ত্রী বলছেন, বাসা থেকে বের হওয়ার আগে একটা ফোন আসে। ফোনে কথা বলার পরই সাধন বাসা থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু কে ফোন করেছিল, সে তথ্য তিনি দিতে পারেননি। আবার সাধনের সঙ্গে কারো বিরোধ ছিল কিনা, সে বিষয়ে স্বজন কিংবা পরিচিতদের কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

রোববার রাত ১০টার দিকে বাড্ডা গুদারাঘাট ৪ নম্বর গলির একটা চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় সাধনকে গুলি করে পালিয়ে যান দুই ব্যক্তি। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

কামরুল আহসান সাধন ২০১৮ সাল থেকে এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করেন। মধ্য বাড্ডার বউবাজার এলাকায় ৫৬/৭ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার ভাড়া বাসায় স্ত্রীসহ প্রায় ২২ বছর ধরে বসবাস করছিলেন তিনি।নিঃসন্তান এই দম্পতির বসবাস করা এই বাড়ির মালিক কাইয়ুম কমিশনার।

বাসা থেকে দুই মিনিটের হাঁটাপথের দূরত্বে বাড্ডা হাই স্কুল সংলগ্ন একটি বাসায় ছিল তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘স্বদেশ কমিউনিকেশনের’ অফিস। এর পরের গলিতেই স্থানীয় তিন বন্ধুর সঙ্গে বসে থাকার সময় গুলিতে খুন হন সাধন।

এ ঘটনায় সোমবার সকালে নিহতের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “ঘটনাস্থল ও আশপাশের একাধিক সিসিটিভির ভিডিও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, চার নম্বর রোডে দুই ব্যক্তি সাধনকে গুলি করে হেঁটে চলে যাচ্ছেন।”

স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বলেন, “উনি রাত পৌনে ১০টার দিকে বাসায় আসেন। প্রতিদিন এই সময়েই ফেরেন। খাবার ও ওষুধ খেয়ে আবার হাঁটাহাঁটি করতে যান, পরে রাত ১১-১২টার দিকে বাসায় ফেরেন। কাল যখন বাসায় আসেন, তখন কোনো কথা হয় নাই; আমি নামাজে ছিলাম। আমি বলছিলাম, নামাজ শেষ কইরা খাবার দিব, উনি শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলেন। এরমধ্যেই উনার মোবাইলে একটা ফোন আসে; এরপর বের হয়ে গেল। কে ফোন দিছে জানি না। আমার সঙ্গে আর কথা হয় নাই; একটু পরেই তো এ ঘটনার খবর পাইলাম।”

দিলরুবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাধনের আগে গুলশানে সোনালী ব্যাংকের নিচে ‘দেশ রেস্টুরেন্ট’ ছিল। সেটি ছেড়ে দেওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা শুরু করেন।সাধনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর থানা এলাকায়; বাবা-মা বেঁচে নেই। তার একমাত্র বোনের বাসা ঢাকার উত্তরা এলাকায়।

ঘটনার সময় জাকির হোসেন রূপক, আবুল হোসেন, কামরুল ইসলাম বাবুলসহ একসঙ্গে বসা ছিলেন সাধন। চারজনই এলাকার স্থানীয় বন্ধু। এরমধ্যে কামরুল ইসলাম বাবুল স্থানীয় কাইয়ুম কমিশনারের ভাগ্নে। সাধনের বাড়ির দ্বিতীয় তলাতেই পরিবারসহ বসবাস করেন তিনি। সাধন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে কে ফোন করেছিল, বিষয়টি জানেন না কামরুল ইসলাম বাবুলও। তথ্য দিতে পারেননি সাধনের সঙ্গে কারও পূর্ব শত্রুতা বা দ্বন্দ্বের বিষয়েও।

তিনি বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে বন্ধু, একসঙ্গে বড় হইছি। ঘটনার ৫-৭ মিনিট আগে আইসা বসছে। তাকে কে ফোন দিছিল জানি না। সে এখানে আসার পরই আমাদের দেখা হইছে।

এ ঘটনায় করা মামলায় বাদী লিখেছেন, এলোপাতাড়ি গুলিতে সাধনের ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে, বুকের নিচের অংশে ও পেটে জখম হয়। প্রথমে অটোরিকশায় মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত হয়।

হত্যার মোটিভের বিষয়ে এখনো কোনো ধারণা পাওয়া যায় নি। ফোন কলের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বাংলাফ্লো/আফি

Leave a Comment

Comments 0