বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার এক মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
একই মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দেয়া হয়েছে দুই মাসের কারাদণ্ড।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার এই রায় দেয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এগারো মাস আগে ক্ষমতা ছেড়ে দেশান্তরী হওয়ার পর এই প্রথম কেনো মামলায় শেখ হাসিনার সাজা হল।
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের কথিত টেলি আলাপের একটি অডিও টেপ ভাইরাল হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার এই মামলা হয়।
ওই অডিও টেপে বলতে শোনা যায়– ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’।
পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা জানায়।
এই প্রেক্ষাপটে গত ৩০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনা ও শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেন।
সেদিন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে ১৫ মের মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা জবাব দাখিল না করায় ২৫ মে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত হননি কিংবা কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেননি। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারে।
আইন অনুযায়ী, এ ধরনের মামলায় কোনো পক্ষের জন্য সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগের বিধান না থাকলেও ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে’ শেখ হাসিনার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয় আদালত।
এ মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) দায়িত্ব দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সেই ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে বুধবার শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিল।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
এ পর্যন্ত তিনটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
জুলাই-অগাস্টের দমন-পীড়নে ভূমিকার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাফ্লো/এসকে
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0