বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে দ্রুত মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিএডিসি প্রথমবারের মতো দেশে সিপিআই সিস্টেম চালু করা উদ্যোগ নিয়েছে। পানির অপচয় রোধ করার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সেন্টার পিভট ইরিগেশন (সিপিআই) সিস্টেমে সেচ কাজ পরিচালনা করা হয়। সিপিআই সিস্টেমে স্প্রে আকারে বৃষ্টির মতো করে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে ফসলের পাতা ও মাটি সসুষমভাবে পানি পেয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে পানির ব্যবহার বা কর্মদক্ষতা প্রায় ৮৫ থেকে ৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমস এর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা আর অসহযোগিতার কারণে সিপিআই প্রকল্পটি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আমদানীকারী প্রতিষ্ঠান শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
শনিবার (২৮ জুন) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু তাহের। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কোম্পানিটির ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন ও প্রজেক্ট ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু তাহের বলেন, বিএডিসি সিপিআই সিস্টেমের মাধ্যমে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানিকে কাজে লাগানোর জন্য সেচ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং এর জন্য দরপত্র আহবান করেছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড দরপত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যাদেশ পায়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা ইউরোপের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান BAUER, Austria-এর কাছ থেকে একটি সিপিআই সিস্টেম আমদানি করি। এই সিস্টেমটি শুল্কায়নের জন্য বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে।
তিনি বলেন, সিপিআই সিস্টেমটি একটি সম্পূর্ণ সিস্টেম যার একটি যন্ত্রাংশকে যদি সিস্টেম থেকে বিযুক্ত করা হয়, তাতে সম্পূর্ণ সিস্টেমটি অকার্যকর হয়ে যাবে। যে কারণে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই যন্ত্রটিকে একক সিস্টেম হিসেবে রপ্তানি করে থাকে। বিএডিসির কার্যাদেশ এবং চট্টগ্রামের কাস্টমস হাউস কমিশনারের কাছে পাঠানো চিঠিতেও সিপিআই সিস্টেমকে একক সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস-এর কর্মকর্তা এ এইচ এম মাহবুবুর রশিদ এবং মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সিপিআই সিস্টেমকে একক সিস্টেম হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নন।
তিনি বলেন, কৃষিযন্ত্র হিসেবে এর প্রকৃত ডিউটির হওয়ার কথা ছিল ১২ লাখ সাড়ে ৫ হাজার টাকা। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস সিস্টেমটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে আলাদা করে, বিশেষ করে সিস্টেমটির যন্ত্রাংশ ওয়াটার ডিস্ট্রিবিউশনও টাওয়াবে ব্যবহৃত ৫ টন পাইপকে আলাদা করে শুল্কায়ন করছে। এই পদ্ধতিতে শুল্কায়ন করা হলে শুল্ক ও জরিমানাসহ কমবেশি ৪২ লাখ টাকা দিতে হবে। এছাড়া খালাস না করতে পারায় প্রতিদিন আমাদের ১৫০–২০০ ডলার অতিরিক্ত বন্দর চার্জও গুনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সমস্যা নিরসনে বিএডিসি থেকে গত ২৫ জুন চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার বরাবর সিস্টেমটিকে একক কৃষি যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে পত্র প্রদান করেছেন। এর আগে গত ২৪ জুন আমরা এ বিষয়ে অবহিত করিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কমিশনারের কাছে একটি চিঠি জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার দপ্তর থেকে আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া পাইনি।
তিনি বলেন, সিপিআই সিস্টেমটি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম যন্ত্র হিসেবে স্থাপন করা হবে বিধায় প্রস্তুতকারী অস্টিয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে দুইজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সিস্টেমটি কাস্টমস বিভাগে আটকে থাকায় তাদের আসার ব্যাপারে আমরা সম্মতি জানাতে পারছি না। এছাড়া কাস্টমস বিভাগের অসহযোগিতা অব্যাহত থাকলে পুরো প্রকল্পটি ভেস্তে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। এতে আমাদের প্রতিষ্ঠান সীমাহীন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশও কৃষির ক্ষেত্রে একটি আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হবে।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0