বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (৭৭) ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমের (৪০) বিরুদ্ধে ‘আদালত অবমাননা’র অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) বাংলা দৈনিক যুগান্তর ও ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ (New Age) পত্রিকায় এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
আগামী ৩ জুন (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিলকে হাজির হতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ১১(৪) ধারা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কার্যপ্রণালী বিধিমালা-২০১০ এর ৪৫ বিধি অনুসারে অভিযুক্ত/অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালে উপস্থিতির নোটিশ শিরোনামে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- যেহেতু অভিযুক্ত (১) শেখ হাসিনা (৭৭) এবং অভিযুক্ত (২) শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমের (৪০) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি-১) বিজ্ঞ চিফ প্রসিকিউটর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ১১(৪) ধারা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি-১) বিধিমালা- ২০১০ এর ৪৫ নং বিধির অধীনে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছেন। ওই অভিযোগের বিরুদ্ধে জবাব দাখিলের জন্য তাদের বরাবরে নোটিশ পাঠানোর পরও তারা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়নি এবং কোনো জবাব দাখিল করেননি- তাই আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকতর সুযোগ প্রদানের জন্য তাদের এই মর্মে পুনরায় নোটিশ প্রদান করা যাচ্ছে যে, তারা আগামী ৩ জুন সকাল ১০টায় ট্রাইব্যুনালে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে তাদের জবাব/বক্তব্য দাখিল করবেন। অন্যথায় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ সম্পন্ন হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নির্দেশক্রমে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ, এস, এম রুহুল ইমরান (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) স্বাক্ষরে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
গতকাল রবিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে তাদের হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বহুল প্রচারিত একটি একটি বাংলা পত্রিকা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
ওইদিন আদালত অবমাননার মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও শাকিল আলম বুলবুলের হাজির হওয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে আজ তারা কেউই হাজির হননি। এমনকি তারা নিজে বা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেননি।
পরে চিফ প্রসিকিউটরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ শেখ হাসিনা ও শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আগামী ৩ জুন এই মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমের বিরুদ্ধে গত ৩০ এপ্রিল আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে চিফ প্রসিকিউটর। সেদিন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগটি গ্রহণ করে আগামী ১৫ মে এর মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের এ সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নের্তৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। কিন্তু ওইদিন কোনো জবাব দাখিল না করায় তাদের আজকের দিনে (২৫ মে) ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা হাজির হননি বলে অবহিত করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
চিফ প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালকে বলেন, “শেখ হাসিনা ও শাকিলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি হয়েছে। কিন্তু কোনো জবাব দাখিল করেননি। এরপর ট্রাইব্যুনাল থেকে তাদের হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা হাজির হননি। তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য যেন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “যদি তারা ট্রাইব্যুনালে হাজির না হয়ে থাকেন, তখন যেন ট্রাইব্যুনাল থেকে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হয়। আমাদের এমন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ দুটি বহুল প্রচারিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করতে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের প্রতি নির্দেশনা দেন।”
‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’-বলে শেখ হাসিনার একটি অডিও ভাইরাল হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথপোকথন এর ফরেনসিক পরীক্ষা করে সত্যতা পায়। এরপরই আদালত অবমাননার আবেদন দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে।
৩০ এপ্রিল আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনা ও শাকিল আলমের মধ্যে যে কথপোকথন হয়েছে তার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়াকে উনারা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন। যেসব মামলা ট্রাইব্যুনালে রয়েছে সেগুলোকে প্রি-জুডিস করার চেষ্টা করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা মনে করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সাক্ষীরা এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে ভয় পাবেন। বিচার ও তদন্ত প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।”
এরই ধারাবাহিকতায় সিআইডি তাদের কথপোকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করেছে। তাতে এই কথপোকথনের সত্যতা পাওয়া গেছে। এজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়।
বাংলাফ্লো/এসও
Comments 0