Logo

গ্রাহকদের ২০ লাখ টাকা নিয়ে ওজোপাডিকোর মিটার রিডার উধাও

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মিটার রিডার মোক্তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রতিনিধি

রাজবাড়ী: ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকোর) মিটার রিডার মোক্তার বিশ্বাসের (৪০) বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণা করে অর্ধশতাধিক গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের প্রায় ২০ লাখ টাকা নিয়ে তিনি উধাও হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।

এ ঘটনায় বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। তারা বলছেন- মিটার রিডার মোক্তার বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে চার শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তারা বলছে- গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিটার রিডার মোক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি মোক্তারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড চরনারায়ণপুর গ্রামের সেলিম রেজা ওরফে সেলিম মাস্টারের ছেলে মো. মোক্তার বিশ্বাস সদর উপজেলার আলীপুর ও শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ওজোপাডিকোর বিদ্যুতের মিটার রিডার হিসেবে হিসেবে কাজ করে আসছে। অভিযুক্ত মুক্তার বিশ্বাস রাজবাড়ী জেলার ওজোপাডিকোর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী মিটার রিডার হিসেবে পরিচয় দিয়ে আলীপুর ও শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিল তৈরি, গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ, বিকাশের মাধ্যমে বিল আদায় এবং নতুন সংযোগের নামে অর্থ গ্রহণ করতো। ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছরে ২টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে এখন গা ঢাকা দিয়েছে। এখন বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ওই সব গ্রাহকদের বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, মিটার রিডার মোক্তার অধিকাংশ গ্রাহককে ভুয়া বিল প্রদান করে, যা বিদ্যুৎ বিভাগের স্বাক্ষর ও লোগোসহ ছাপানো ছিল। এছাড়াও সে জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকের সিল নকল করে বিলের কাগজের ওপর ব্যাংকের সিল মেরে, সই করে ও সরকারি স্ট্যাম্প মেরে গ্রাহকদের বিল পরিশোধের কপি দিত। এই প্রতারণার ফলে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা এখন প্রকৃত বিদ্যুৎ বিলের বিপরীতে আবার অর্থ পরিশোধের চাপের মুখে রয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অবিচার। যদি মাসের পর মাস বকেয়া বিল থাকতো, তাহলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতো। কিন্তু সেটা করা হয়নি। যা থেকে বোঝা যায় যে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাকে সহযোগিতা করেছে।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দাবি- মিটার রিডার মোক্তার বিশ্বাস প্রায় ৪ শতাধিক গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন।

গোয়ালন্দ মোড়ের বাসিন্দা ভুক্তভোগী কোরবান গাজী বলেন, মোক্তার আমাদের এলাকার মিটার রিডার। তাকে আমি বিশ্বাস করে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২৫ এর জুন পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের বিদ্যুৎ বিলের টাকা মোক্তারের কাছে দিয়েছি পরিশোধ করার জন্য। সে বিলের কাগজের ওপর ব্যাংকের সিল মেরে, স্ট্যাম্প মেরে আমার কাছে নিয়ে এসে বলতো বিল দিয়ে এসেছি। আমরা ব্যাংকের সিল ও স্ট্যাম্প দেখে বুঝতাম বিল পরিশোধ হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ বিদ্যুৎ অফিস আমার ১৫ মাসের ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বিল বকেয়া দেখিয়েছে। আমাকে এখন এই টাকা তারা পরিশোধ করতে বলছে। কিন্তু আমি কোনো মাসের বিল বকেয়া রাখিনি, সব মাসের টাকা রিডারম্যান মোক্তারের কাছে দিয়েছি। এই ১৫ মাস বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নাই। আমি এখন এতো টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো। মোক্তারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং আমাদের বিলের টাকা মওকুফ করা হোক।

ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা মোক্তারকে বিশ্বাস করে তার কাছে বিদ্যুৎ বিলের টাকা পরিশোধ করার জন্য দিতাম। সে সই-স্বাক্ষর দিয়ে দেখিয়েছে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সে বিল পরিশোধ করেনি। কিছুদিন আগে আমাকে বিদ্যুৎ অফিস থেকে জানানো হয়েছে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত আমার ২ লাখ ১২ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। আমরা জানি ৩ মাস বকেয়া থাকলে নোটিশ পাঠিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আমার দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি তারা বকেয়া দেখিয়েছে, কিন্তু বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করেনি। আমার বিদ্যুৎ বিল মাসের পর মাস জমা হচ্ছে না- এটা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু সেটা বিদ্যুৎ বিভাগ করেনি। তারা দীর্ঘ ১৫ মাস জানাচ্ছি বিল বকেয়া রয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে মোক্তার ও বিদ্যুৎ বিভাগের লোক যারা রয়েছে তারা এই টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত।

ভ্যানচালক মো. বাবুল শেখ বলেন, একমাস আগে আমার বিদ্যুৎ বিলে ৭৫ হাজার ৫৬৩ টাকা বকেয়া বিল করা হয়েছে। পরে আমি বিলের কাগজ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে আসলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান আমি বিল পরিশোধ করিনি। আমি ভ্যান চালিয়ে প্রত্যেক মাসের বিল মাসেই মোক্তারকে পরিশোধ করার জন্য দিয়েছি। কিন্তু আমার বিলে ৭৫ হাজার টাকা বকেয়া দেখিয়েছে। ২০২৩ সালের বকেয়া বিল ২০২৫ সালে দিয়েছে। আমি ভ্যান চালিয়ে এই টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের দায়সারা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করেছি। তদন্তে গ্রাহকদের অভিযোগের কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। যে মিটার রিডারের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে আমরা তাকে অব্যাহতি দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগের কপি চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং থানা থেকে অভিযোগের কপিটি সংগ্রহ করে নিতে বলেন।

এ বিষয়ে সদর থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের অফিসিয়াল প্যাডে লেখা একটি অসম্পূর্ণ লিখিত অভিযোগ তারা পেয়েছেন। বিদ্যুৎ বিভাগকে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অভিযোগটি এজাহার আকারে পূর্ণাঙ্গ করে লিখে থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, আমি আজকেই অভিযোগটি পেলাম। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনলাম। আমি এ বিষয়ে ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করব। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় হয়ত আমি ভুক্তভোগীদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবো।

বাংলাফ্লো/এসকে

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0