বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজধানীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ঢাকা’র উদ্যোগে ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি ঘোষণা করেছে। ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে শুক্রবার (২৭ জুন) থেকে আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠানমালায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পদাবলি কীর্তন, ধর্মীয় নাটকসহ নানা আয়োজন থাকছে।
বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী এসব তথ্য জানান। ঢাকায় রথযাত্রা সামনে রেখে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
উৎসবের মূল আকর্ষণ রথযাত্রা স্বামীবাগ আশ্রম থেকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেল ৩টায় শুরু হতে যাওয়া রথের এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় লক্ষাধিক ভক্ত সমাগমের প্রত্যাশা করছে ইসকন। আগামী ৫ জুলাই উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এই উৎসব সমাপ্ত হবে।
আসন্ন রথযাত্রার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, যতদিন রথযাত্রা হয়েছে কোনো সমস্যা হয়নি। এবারও নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছি না, ভয়-ভীতি অনুভব করছি না। নির্বিঘ্নে রথযাত্রা অনুষ্ঠানে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং প্রশাসন সহযোগিতা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শোভাযাত্রাসহ উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তায় নিজস্ব প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকও নিয়োজিত থাকবেন। তাই সব মিলিয়ে আশা করছি, এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা হবে। তিনি রথযাত্রা উৎসব এবং শোভাযাত্রায় স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য সনাতন সম্প্রদায়সহ ভক্তদের প্রতি অনুরোধ জানান। পাশাপাশি রথ টানা বা শোভাযাত্রায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখারও অনুরোধ জানান।
ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল ৮টায় বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শুভ রথযাত্রা মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। দুপুর দেড়টায় আলোচনা সভা শেষে বিকেল ৩টায় রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করা হবে।
ঢাকায় রথযাত্রার রুট জানিয়ে চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ইসকন স্বামীবাগ আশ্রম থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট মাজার, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় হয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে পৌঁছাবে। পরবর্তীতে আগামী ৫ জুন বিকেল ৩টায় উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা একই পথে বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে আনা হবে। তবে রথের শোভাযাত্রার উদ্বোধন এবং উল্টো রথযাত্রায় কে প্রধান অতিথি থাকবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি জানান, ১৯৯২ সাল থেকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত রথযাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকে ইসকন স্বামীবাগ আশ্রম থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। আগে একটি রথ নিয়ে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হলেও এখন রথযাত্রায় তিনটি রথ থাকে।
ইসকন বাংলাদেশের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, রথযাত্রা ঘিরে ভারতের উড়িষ্যার পুরীতে সবচেয়ে বেশি ভক্তের সমাগম ঘটে। এর পরেই অবস্থান ঢাকার। এখানে শোভাযাত্রায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়। আশা করি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এছাড়া রথযাত্রায় সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও অনেকে বাড়ি-ঘর এবং রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দর্শন করে মনের ইচ্ছা পূরণ করেন। সব মিলিয়ে রথযাত্রার মধ্য দিয়ে ঢাকা শহরে কয়েক লক্ষ মানুষ শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবকে দর্শন করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জগন্নাথদেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়, জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এই বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমূর্তি রেখে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। শ্রী জগন্নাথ, শ্রী বলদেব ও সুভদ্রাদেবী সুদর্শনসহ বছরে ৯ দিন শ্রীমন্দির থেকে বাইরে থাকেন। এক দিন গুণ্ডিচায় যাবার জন্য (রথযাত্রা), সাত দিন সেখানে অবস্থান এবং এক দিন প্রত্যাবর্তন (উল্টোরথ)। এই যাত্রাকে রথযাত্রা বলা হয়ে থাকে। পুরাণান্তরে এই রথযাত্রা বিভিন্ন নামে পরিচিত। মহাবেদী মহোৎসব, পতিতপাবন যাত্রা, দক্ষিণাভিমুখী যাত্রা, গুণ্ডিচা মহোৎসব, আড়প যাত্রা প্রভৃতি।
রথযাত্রা অত্যন্ত সুপ্রাচীন মহোৎসব। সর্বপ্রাচীন গ্রন্থ স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী, সত্যযুগে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন জগন্নাথ দেবের শ্রীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে রথযাত্রা উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। পুরী জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার প্রচলন হয়। বর্তমানে এই রথযাত্রার পরিধি ভারতের সীমা পেরিয়ে পৃথিবীজুড়ে পরিব্যাপ্ত। বাংলাদেশেও রথযাত্রা হিন্দুদের একটি পবিত্র উৎসব। ঢাকার ধামরাইয়ে এটি পরিচিত যশোমাধবের রথযাত্রা নামে। গাজীপুরের জয়দেবপুরে মাণিক্যমাধবের রথযাত্রা।
চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী জানান, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ইসকনের ১২৮টি মন্দির ও আশ্রমে এ দিন রথযাত্রা হবে। এছাড়া অন্যান্য মন্দিরেও রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, ঢাকার ধামরাইয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত হবে যশোমাধবের রথযাত্রা। এছাড়া পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির এবং শাঁখারীবাজার একনাম কমিটিসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও দেশের বিভিন্ন মন্দিরেও রথটান অনুষ্ঠিত হবে।
মতবিনিময় সভায় ইসকন বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বিমলা প্রসাদ দাস, হৃষিকেশ গৌরাঙ্গ দাস, নন্দন আচার্য দাস, জনসংযোগ বিভাগের সহ-পরিচালক ও যুব প্রচারক জয় মহাপ্রভু দাস, ইসকন উত্তরার অধ্যক্ষ শুভ নিতাই দাস, সাংবাদিকদের মধ্যে অনিমেষ কর, শিব শংকর মোদক, শ্যামল কান্তি নাগ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ইসকন বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বিমলা প্রসাদ দাস, হৃষিকেশ গৌরাঙ্গ দাস, নন্দন আচার্য দাস, জনসংযোগ বিভাগের সহ-পরিচালক ও যুব প্রচারক জয় মহাপ্রভু দাস, ইসকন উত্তরার অধ্যক্ষ শুভ নিতাই দাস, সাংবাদিকদের মধ্যে অনিমেষ কর, শিব শংকর মোদক, শ্যামল কান্তি নাগ বক্তব্য দেন।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0