বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: উড্ডয়নের সময়ে বিমানের এক চাকা (বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ার) খুলে পড়ে যাওয়ার ঘটনার পেছনে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করছেন এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা।
১৬ মে শুক্রবার কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসার সময় এক চাকা (বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ার) খুলে পড়ে যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্যাস-৮ উড়োজাহাজের। পাইলটের প্রথম চেষ্টাতেই শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণে করে ফ্লাইটটি। এতে নিশ্চিত বড় রকমের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় উড়োজাহাজটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ফ্লাইট শুরুর আগে নিয়ম অনুযায়ী উড়োজাহাজ ইন্সপেকশন করা রুটিন ওয়ার্ক এবং উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে এই এই ফ্লাইটের ল্যান্ডিং গিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এ কারণে ল্যান্ডিং গিয়ারে থাকা গ্রিজ শুকিয়ে যাওয়ার কারণে উড়োজাহাজ উড্ডয়নের সময় চাকা খুলে পড়ে। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে।
বিমান বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, ম্যানুফেকচারার কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী ল্যান্ডি গিয়ার ৬ মাস পর পর মেইনট্যানেন্স করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি।
এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটা ল্যান্ডিং গিয়ার কতগুলো ফ্লাইট ল্যান্ডিং এবং উড্ডয়ন করতে পারবে তা নির্দিষ্ট করা আছে। এরপর গিয়ার পরিবর্তন করতে হয়। এছাড়া নির্দেশনা অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। প্রতিটি উড়োজাহাজ ফ্লাই করার আগে ইন্সপেকশন করা হয়। ইন্সপেকশন করেন একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। এই উড়োজাহাজটিও উড্ডয়নের আগে ইন্সপেকশন করে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এত সহজেই এটি খুলে পড়ার কথা না। এই ঘটনার পেছনে সেই ইঞ্জিনিয়ার এবং বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের দায় রয়েছে।
তথ্যানুযায়ী, উড়োজাহাজটি একই দিন সিলেট রুটেও চলাচল করে। কক্সবাজার-ঢাকা রুটে চলাচল করার আগে উড়োজাহাজটির মেইনটেনেন্স লগ বইতে ইন্সপেকশন করে ‘‘সকল হুইল কন্ডিশন এবং সিকিউরিটি সেটিসফ্যাকটরি’ লেখা হয়েছে। উড়োজাহাজটি মোট ৯৭৬৮ বার ল্যান্ডিং করেছে।
ফ্লাইটের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিমানের উড়োজাহাজটি কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করার পর একটি চাকা খুলে পড়ে যায় যা পাইলট বা কেউ টের পাননি। বিমান বন্দরে উড্ডয়নের অপেক্ষায় থাকা আরেকটি উড়োজাহাজের পাইলট দেখতে পান যে, উড্ডয়ন করা উড়োজাহাজটি থেকে কী যেন পড়ছে। এটা দেখে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) রুমকে বিষয়টি অবহিত করেন। এটিসি থেকে পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহকে অবহিত করা হয়। তখন তারা বিষয়টি জানতে পারেন। ফ্লাইটটি দিনের বেলা হওয়ায় এবং আরেক পাইলট দেখে ফেলায় বিষয়টি ধরা পড়েছে। ফ্লাইটটি রাতের বেলা হলে বা কেউ না দেখলে ওই অবস্থায় উড়োজাহাজ অবতরণ করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। বিষয়টি জানার পর পাইলট ডান সাইডে প্রেশার দিয়ে এবং ইমার্জেন্সি সহায়তা নিয়ে নিরাপদে উড়োজাহাজটি অবতরণ করাতে সক্ষম হন। চাকা খুলে পড়ার বিষয়টি ফ্লাইটের কেউ যে সাথে সাথে টের পাননি তা ওই ফ্লাইটের সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিমান বাংলাদেশ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট সেফটি ম্যানুয়াল, ধারা ৭.৮ অনুসারে নিরাপত্তা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ৪ সদস্যের এই তদন্ত কমিটিকে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার কথা বলা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সুপারিশ করতেও বলা হয়েছে।
বাংলাফ্লো/আফি
Comments 0