জেলা প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জ: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘বাপের বেডা অইলে ইলেকশনে আসো।’
বুধবার (২ এপ্রিল) রাতে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জুড়ি ইউনিয়ন বাজারে ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ফজলুর রহমান বলেন, ভোট করেন, ঠিক আছে, আপনেরা পাল্লা মার্কা লইয়া করবেন, আমরা ধানের শীষ নিয়া করব। পাবলিকরে ডিছিশান নিতে দেন। যারে পাবলিক ভোট দিব, হে দেশ চালাইবো। কথাডা ঠিক না বেঠিক? তাইলে বহাবহি করেন কেন?
তিনি বলেন, খালি পিছন দিক দিয়া কালো অন্ধকারে বইসা বইসা গুট গুট করেন কেন? ১০ বছর কেমনে বিনা ভোটে থাহন যায়! কারণ জানেন, ভোট করলে কিচ্চু থাকবে না। জামানত থাকবে না অনেক যায়গায়, জামানত থাকবে না। এলহা এলহা ভোট করলে তিনডা সিট পাইবেন না, কিন্তু তিন শ সিটের পাওয়ার দেখাইতাছেন।
তিনি আরও বলেন, সমস্ত প্রশাসন দখল কইরা বসছে, একটা লোক নাই, দুই পার্সেন্ট লোক নাই, পায়ের উপরে পা তুইল্লা গিয়া কয়, আমি হইলাম অমুক ইসলাম, আমার কথা মানতে হবে। ইউএনও চলে তার কথায়, ডিসি চলে তার কথায়, প্রশাসন চলে তার কথায়। কেন? বাপের বেটা হইলে ইলেকশনে আসো, ইলেকশনে আসো। ইলেকশানে দেখা যাবে বাংলাদেশের মানুষ কাকে দায়িত্ব দেয়, কথাডা আমি হাছা কইছি নাকি মিছা কইছি?
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, মা না থাকলে যেমন কোনো সন্তানের জন্ম হবে না, ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধ না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। সেই মুক্তিযুদ্ধের যখন কেউ বিরোধিতা করে, তখনই তো আমি দেখি—লোকটা কে রে? ওই যে লোকটা, একাত্তর সালে ওর বাবা যে দালাল ছিল, দালালের ছেলে। একাত্তর সালে যে রাজাকার ছিল, সে রাজাকারের ছেলে। আলবদর ছিল, আলবদরের নাতি। তা না হলে তো একাত্তর সালের বিরোধিতা করা উচিত না।
তিনি বলেন, হাসিনা আর মুক্তিযুদ্ধ এক রকম না। হাসিনা কেউ না, আরইলের ডিম। মুক্তিযুদ্ধ হলো মহাসাগর। হাসিনা গ্যাছে গ্যাছে। হাসিনা খারাপ করছে মুক্তিযুদ্ধের কথা বইলা। হাসিনার বিচার হওয়া উচিত। মানুষ হত্যা করার অপরাধে তার ফাঁসি হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের দোষটা কী?
তিনি আরও বলেন, আমি যে বক্তব্য দিই, অনেকের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক সময় হয়। কী বক্তব্য দিই? আমি কারো বিরুদ্ধে নয়, কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়। আমি মানুষের পক্ষে।
ফজলুর রহমান বলেন, মানুষের পক্ষে কথা বলি বলেই আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। কারণ মা না থাকলে যেমন কোনো সন্তানের জন্ম হবে না, ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধ না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। সেই মুক্তিযুদ্ধের যখন কেউ বিরোধিতা করে, তখনই তো আমি দেখি লোকটা কে রে? ওই যে লোকটা ৭১ সালে ওর বাবা যে দালাল ছিল, দালালের ছেলে। ৭১ সালে যে রাজাকার ছিল, সে রাজাকারের ছেলে। আলবদর ছিল, আল বদরের নাতি। তা না হলে তো ৭১ সালের বিরোধিতা করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, এই দেশে ইলেকশন আনার চেষ্টা করতেছি আমি একা। আমি একা প্রথম বলছি, এটার জন্য জামায়াতে ইসলামী আমাকে বলবে (গালাগাল করবে)। কিন্তু ইলেকশন দিতে হবে। কারণ দেশটা হলো জনগণের। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে ভোটের মাধ্যমে দেশটা কারা চালাবে।
তিনি আরও বলেন, ইলেকশন হবে, ভোট দেবে মানুষ। আমাকে ভোট দিলে আমি হবো এমপি। আমার দলকে বেশি ভোট দিলে আমার দল হবে সরকার। অন্য দলকে দিলে তারা হবে। ভোটটা হলে দেশ হবে জনগণের। আমি মনে করি, ভোট হওয়া উচিত।
ফজলুর রহমান বলেন, ভোট যদি হয় আমি এই দেশে আসব। ভোট হলে আমি এ দেশে আসবই। আমি ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামের ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে বলব, হে ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইনের মানুষ, আপনার জন্য তো আমার জীবনের যৌবন ত্যাগ করেছি। আমি তো আপনার পাহারাদার বস্তিওয়ালা, জাগো। দেখেন বৃদ্ধ বয়সে ফজলুর রহমান আপনাদের কাছে এসেছে, আপনারা তাকে চান কি না, সেই কথা বলে দেন।
ফজলুর রহমান বলেন, রাজনীতি মানুষের জীবনের জন্য। মানুষের জীবন ভালো কাজ করার জন্য। এই যে মানুষের জীবন, এই মানুষের জীবনের পক্ষে আমি আমার জীবনে ৬১ বছর দিনের পর দিন সংগ্রাম করেছি। আমার জীবনে কোনো টাকা হয়নি, পয়সা হয়নি, ব্যাংক ব্যালান্স হয়নি। আমি জীবনে কোনো দিন মানুষকে ঠকাইনি। আমি ফোর টুয়েন্টি না, বাটপারি না, চিটার না। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। ভাটি এলাকাতে জন্মগ্রহণ করে আমার জীবন ধন্য হয়েছে।
পথসভায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফজলুর রহমানের সহধর্মিনী সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম রেখা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এসএম কামাল, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুজ্জামান ঠাকুর (স্বপন), উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলামসহ (জুয়েল) উপজেলা বিএনপির নেতারা।
এর আগে ঈদ পরবর্তী এক পথসভায় তিনি বলেন, রাজাকারের হাতে এই দেশ ছেড়ে দেব না। আপনারা যদি ভাবেন, রাজাকারের সন্তানরা এই দেশ শাসন করবে, ভুলে যান। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে যাব, এই দেশ মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ। আপন ভাইয়ের সন্তানের জ্বালায় জান বাঁচে না, আবার সৎভাইয়ের সন্তানেরা আইছে। এরা কারা? যারা ওই মুক্তিযুদ্ধের সময় দালালি করছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা রাজাকার-আলবদর ছিল। তৌহিদি জনতা আমার পোস্টারে কেন জুতা মারেন? মারেন, আমার কপালেও মারেন। কারণ এই দেশ স্বাধীন করে আপনাদের মাফ করছি বলেই তো বেঁচে আছেন।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0