Logo

ছেলেদের চুরির অপবাদে সালিসে মায়েদের নাকে খত দেওয়ালেন বিএনপি নেতা

পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু হাতে লাঠি নিয়ে অশ্রাব্য বাক্য উচ্চারণ করে দুজনকে নাকে খত দেওয়ায়।

ছবিঃ ভিডিও থেকে নেওয়া

জেলা প্রতিনিধি

ফেনী: ছেলেদের বিরুদ্ধে হাঁস ও কবুতর চুরির অভিযোগ তুলে দুই মাকে নাকে খত দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়ায় ।

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে মধ্যম মাথিয়ারা এলাকায় খালুর দোকান সংলগ্ন স্থানে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর নেতৃত্বে এক সালিসি বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রোববার (৪ মে)। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই নারীকে নাকে খত দেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

ভুক্তভোগী সাজেদা বেগম সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম মাথিয়ারা গ্রামের মহিন উদ্দিনের স্ত্রী। অন্যজন একই এলাকার বাসিন্দা জোহরা বেগম।

১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আশপাশে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছেন। মাঝখানে সাজেদা বেগম ও জোহরা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছেলের অপরাধে দুজন মায়ের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়। তারা অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু হাতে লাঠি নিয়ে অশ্রাব্য বাক্য উচ্চারণ করে দুজনকে নাকে খত দেওয়ায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মধ্যম মাথিয়ারা গ্রামের জাহাঙ্গীর সরকারের বাড়ি থেকে কয়েকমাস আগে কবুতর চুরির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ সপ্তাহখানেক আগে আবারও তার বাড়ি থেকে হাঁস চুরি হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় রাকিব ও বিজয় নামের দুই যুবককে সন্দেহ করেন তারা। পরে গত বৃহস্পতিবার রাতে মধ্যম মাথিয়ারা এলাকায় খালুর দোকান সংলগ্ন স্থানে সালিসি বৈঠক করা হয়। এতে রাকিবের গলায় ‘আমি চোর’ সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে তার মাকে নাখে খত দেওয়া হয়। সালিসে অভিযুক্ত আরেক যুবক বিজয় উপস্থিত না থাকায় তার মাকেও একইভাবে নাকে খত দেওয়ানো হয়।

এ প্রসঙ্গে সালিসি বৈঠকে অংশ নেওয়া পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মহিউদ্দিন সোহাগ বলেন, ‘সন্তানকে এ ধরনের অপরাধে উৎসাহ দিলে তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এটি আইনের শাসনের বাইরে নয়।’

অভিযুক্ত রাকিবের ভাই সোহেল বলেন, ‘আমরা বহু বছর আগে লক্ষ্মীপুর থেকে এসে মাথিয়ারা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। তারা আমার ভাইকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে পরিকল্পনা করে সালিসি বৈঠকে আমার মাকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছে। এতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলুর নেতৃত্বে যুবদল নেতা ইব্রাহিম খলিল, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন সোহাগ, আবদুল জলিল, বেণু, শহীদ, গিয়াসউদ্দিনসহ অনেকে সামনে থেকে ভূমিকা রাখেন।

স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল বলেন, ‘যেকোনো অপরাধ করলে তাদের আইনের আওতায় আনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দায়িত্বশীল জায়গা থেকেও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সালিসি বৈঠক করে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকাবাসী হিসেবে আমরা নিজেরাও এমন কাণ্ডে লজ্জিত। এ ঘটনার পর বিজয়ের পরিবার তাদের হুমকিতে এলাকা ছেড়েছেন।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা নাসরীন কান্তা বলেন, ‘নারীকে এভাবে হেনস্তা করার অধিকার কারো নেই। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো ভুল হয়ে থাকলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি। হয় তো আমাদের আচরণে বা সিদ্ধান্তে ভুল থাকতে পারে। এছাড়া সালিসে ওই মা নিজেই বলেছেন, ছেলে যদি দোষ করে থাকে, তাহলে তার দায় তিনি নিচ্ছেন।

মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ কেউ ঘটনাটি ভিন্নভাবে প্রচার করছে। সালিসে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এলাকায় যেকোনো ভাড়াটিয়া এলেই যেন তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে, চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট ও এনআইডি আইডি কার্ড দেখে ভাড়া দেওয়া হয় সেজন্য স্থানীয়দের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভিডিওটি নজরে এসেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এটি একটি মানহানিকর ঘটনা হিসেবে মনে করছি। ভুক্তভোগী চাইলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। আমরা তার পাশে আছি। এছাড়া কেউ যদি তাদের হুমকি দেয় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে সালিসি বৈঠকে নারীর প্রতি অসম্মানজনক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর বিএনপির সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করে একটি বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে বিএনপি।

বাংলাফ্লো/এসবি

Leave a Comment

Comments 0