ডেস্ক নিউজ: মাইক্রোসফট ঘোষণা দিয়েছে, এ বছরের ৫ মে বন্ধ হয়ে যাবে স্কাইপ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অডিও-ভিডিও কল করার এই সেবাটি ২০০৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সেবাটি প্রথম চালু হয়েছিল ২০০৩ সালে। ভিডিও কলে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রথম প্ল্যাটফর্ম ছিল এটি।
অ্যান্ড টু অ্যান্ড এনক্রিপশনের মাধ্যমে অত্যন্ত সুরক্ষিতভাবে মেসেজ আদান-প্রদান, ভিডিও কল ও গ্রুপ কল করার সুবিধা পাওয়া যেত। সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এনক্রিপশনযুক্ত যোগাযোগ মাধ্যম ছিল এটিই প্রথম। হ্যাকারদের জন্য স্কাইপে পাঠানো মেসেজ পড়া ছিল অসম্ভব ব্যাপার। এরপর ২০১১ সালে স্কাইপকে কিনে নেয় মাইক্রোসফট।
এরপর থেকেই সেবাটির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। বর্তমানে স্কাইপের গোপনীয়তা নীতি বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। ব্যবহারকারীদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি ও তথ্য চুরির অভিযোগ উঠেছে। তাই মাইক্রোসফটও স্কাইপ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল কাজে লাগিয়ে তৈরি পরিষেবা স্কাইপ। শুরুতে এটি ব্যবহার করত পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেম। তখন কেন্দ্রীয় সার্ভারের ওপর নির্ভর না করে ব্যবহারকারীদের মধ্যে সরাসরি সংযোগ তৈরি হতো, যা পুরোপুরি এনক্রিপ্টেড। অ্যান্ড টু অ্যান্ড এনক্রিপশনে শুধু মেসেজ আদান-প্রদানকারীরাই মেসেজ দেখতে পারেন। স্কাইপ কর্তৃপক্ষও এই মেসেজ দেখতে পারে না।
আজ প্রায় সব মেসেঞ্জার অ্যাপই ব্যবহার করে এনক্রিপশন, যার শুরুটা করেছিল স্কাইপ। তবে পিয়ার টু পিয়ার সিস্টেম ধীরে ধীরে বন্ধ করে সার্ভারভিত্তিক যোগাযোগব্যবস্থা ব্যবহার করতে শুরু করে এই সেবা, যদিও এনক্রিপশন সিস্টেম অটুট ছিল।
কয়েক বছর ধরেই স্কাইপের সুরক্ষা নিয়ে সন্দেহের গুঞ্জন চলছে। বিভিন্ন দেশের সরকার স্কাইপ ব্যবহারকারীদের ওপর নজরদারি করার বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। যেমন—ইতালীয় সরকার স্কাইপের এনক্রিপশন ভাঙার উপায় বের করার জন্য প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিল প্রায় দেড় দশক আগেই। ২০০৮ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল অধিকার গবেষণা দল আবিষ্কার করে, চীনা গুপ্তচররা আড়ি পাতার জন্য স্কাইপের একটি পরিবর্তিত সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা গোপন নথি থেকে জানা যায়, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে কল ও মেসেজ সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে স্কাইপের মালিক মাইক্রোসফট।
মিসরীয় বিপ্লবের সময় ২০১২ সালের ৫ মার্চ ভোরে কায়রোতে অবস্থিত স্টেট সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস (এসএসআই) সার্ভিসের গোপন সদর দপ্তরে তল্লাশি চালায় মিসরীয় বিপ্লবীরা। সেখান থেকে উদ্ধার করা নথিপত্রে প্রথম জানা যায় ফিনফিশার নামের এক সফটওয়্যারের কথা। এটি ব্রিটিশ-জার্মান কম্পানি গামা ইন্টারন্যাশনালের তৈরি। ই-মেইল হ্যাক, অন্যান্য ডিভাইসে স্পাইওয়্যার আপলোড করা, ডিভাইসের সব ধরনের যোগাযোগ ট্র্যাক করা, এমনকি এর মাধ্যমে নেওয়া যায় ডিভাইসটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল, এটি দিয়ে স্কাইপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা যেত। এটিই স্কাইপ হ্যাকের প্রথম অকাট্য প্রমাণ।
স্কাইপ বন্ধের খবরে অনেক ব্যবহারকারীই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী একে তথ্য-প্রযুক্তি ইতিহাসের বড় অধ্যায়ের শেষ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই সেবা ব্যবহারের স্মৃতিচারণা করেছেন অনেকেই।
এখনও তিন কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী নিয়মিত স্কাইপ ব্যবহার করেন। সেবাটি বন্ধ হয়ে গেলে একই অ্যাকাউন্ট দিয়ে তারা মাইক্রোসফট টিমসে লগইন করতে পারবেন। এর সব সেবাই পাওয়া যাবে টিমসে। অবশ্য বহুদিন ধরেই প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা ধারণা করছিলেন, স্কাইপ বন্ধ করে টিমসকেই একমাত্র মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চালু রাখবে মাইক্রোসফট। কেননা একই প্রতিষ্ঠানের দুই প্ল্যাটফর্মে একই সেবা পরিচালনা করা শুধুই সময় ও অর্থের অপচয়।
জেবি