বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: ভক্ত অনুরাগীদের কাদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। শনিবার (১০ মে) সকালে বনানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ওনার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে শারমিনী আব্বাসী। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গতকাল শুক্রবার শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ছিলেন একজন বাংলাদেশি সঙ্গীতজ্ঞ এবং সঙ্গীত বিষয়ক অধ্যাপক ও গবেষক। তিনি লোক সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার আব্বাসউদ্দীন আহমদের কনিষ্ঠপুত্র। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক ভূষিত হয়েছিলেন।
১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে কলকাতায়, তার পরিবারের সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কলকাতাতেই শুরু হয় তার শিক্ষাজীবন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে বিএ অনার্স এবং ১৯৬০ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। সংগীতচর্চা ও সাহিত্যক্ষেত্রে তিনি গড়ে তোলেন নিজের স্বতন্ত্র পরিচিতি। সংগীতবিষয়ক গবেষণায়ও ছিল তার পারদর্শিতা। বেতার ও টেলিভিশনে উপস্থাপনা করেছেন বহু সংগীতানুষ্ঠান। পাশাপাশি, পত্রিকায় কলাম লেখক হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয় ও সুখপাঠ্য এক নাম।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের খ্যাতনামা এক সংগীত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পিতা আব্বাসউদ্দীন আহমদ ছিলেন পল্লিগীতির কিংবদন্তি শিল্পী, যিনি প্রথম এ দেশের পল্লিসংগীতকে বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। তার চাচা আব্দুল করিমও ছিলেন ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি ও পল্লিগীতির জনপ্রিয় গায়ক। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন একজন বিশিষ্ট আইনজীবী। মোস্তফা কামালের কন্যা নাশিদ কামাল নিজেও একজন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী। বোন ফেরদৌসী রহমান দেশের সংগীত অঙ্গনের এক প্রথিতযশা বহুমাত্রিক প্রতিভা হিসেবে পরিচিত। মুস্তাফা জামান আব্বাসী নিজেও ২৫টিরও বেশি দেশে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, বিচ্ছেদি, চটকা ও নজরুলসংগীত পরিবেশন করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর উপস্থাপনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘আমার ঠিকানা’, ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘আপন ভুবন’সহ কয়েকটি অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শুধু সংগীত চর্চা ও লেখালেখিতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, সমাজসেবায়ও তিনি সক্রিয় ছিলেন। রোটারি ক্লাবের গভর্নর হিসেবে অনেক উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এ বরেণ্য সংগীতশিল্পী।
ওনার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘রুমির অলৌকিক বাগান’, উপন্যাস - হরিণাক্ষি’, স্মৃতিকথা ‘স্বপ্নরা থাকে স্বপ্নের ওধারে’, ‘লোকসঙ্গীতের ইতিহাস’, ‘ভাটির দেশের ভাটিয়ালি’। দেশীয় সংগীত ও সংস্কৃতিতে অনন্য অবদান রাখার জন্য একুশে পদকসহ দেশে-বিদেশে তিনি অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
বাংলাফ্লো/এসকে
Comments 0