Logo

রেকর্ড গড়েছে ইলেভেন ১১ বটনেট

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার ওয়েবক্যাম ও ভিডিও রেকর্ডার লক্ষ্য করে বিশাল এক সাইবার হামলা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মোট ৮৬ হাজার ইন্টারনেট অব থিংস ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ‘ইলেভেন১১’‌ নামের একটি ম্যালওয়্যার।

ডেস্ক নিউজ: ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার ওয়েবক্যাম ও ভিডিও রেকর্ডার লক্ষ্য করে বিশাল এক সাইবার হামলা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মোট ৮৬ হাজার ইন্টারনেট অব থিংস ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ‘ইলেভেন১১’‌ নামের একটি ম্যালওয়্যার। হ্যাকড ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ডেটা ট্রাফিক তৈরি করে বেশ কিছু ওয়েবসেবাদানকারী সার্ভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এই হামলার হোতারা। মূলত যোগাযোগ ও গেম হোস্টিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভার লক্ষ্য করেই হামলাটি চালানো হয়।

এর ফলে সেসব ওয়েবসাইট ও অনলাইন সার্ভিসগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ব্যবহারকারীদের অ্যাকসেস বন্ধ হয়ে যায়।

নোকিয়ার ডিপফিল্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম এই হামলার তদন্ত করেছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে ইলেভেন১১বট নামের নতুন এক বটনেট ম্যালওয়্যার। এই ম্যালওয়্যার ইন্টারনেটে সংযুক্ত বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট ডিভাইস, যেমন—স্মার্ট লাইট, স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট বা স্মার্ট ফ্রিজের মতো ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তৈরি করে নিজস্ব নেটওয়ার্ক, যার নাম বটনেট।

এই নেটওয়ার্কের কাজ ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস (ডিডিওএস) ঘরানার সাইবার হামলা চালানো। নোকিয়া গবেষক জেরোম মেয়ার জানান, এই বটনেটে থাকা বেশির ভাগ ডিভাইসের ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ঠিকানা আগে কখনো ডিডিওএস আক্রমণে যুক্ত ছিল না। অর্থাৎ এই বটনেট একেবারে নতুন।

ওয়েবসেবা ব্যবহার ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি এই সাইবার হামলার কারণে লক্ষাধিক ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সংযোগেও নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

অকার্যকর হয়ে যাওয়া ওয়েবসাইট ও সেবাগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর মারাত্মক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, যার মূল্য অন্তত কয়েক মিলিয়ন ডলার। নোকিয়ার গবেষকদলের দাবি, এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিডিওএস হামলা। হামলার শিকার সার্ভারগুলোর প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে ছয় টেরাবিট তথ্য সামলাতে হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারির এক হামলায় সর্বোচ্চ ৫.৬ টেরাবিট পার সেকেন্ড গতিতে তথ্য সঞ্চালনের রেকর্ড ছিল।

রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইরান ও চীনের হ্যাকাররা এ ধরনের হামলা বেশি চালায়। সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা বলছেন, এই বটনেটটির সর্বাধিক আইপি ঠিকানা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে (২৪.৪%)। পাশাপাশি আছে তাইওয়ান (১৭.৭%) এবং যুক্তরাজ্যে (৬.৫%)। সাধারণত হামলার শিকার বেশি হয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।

বাংলাদেশেও বেশ কয়েকবার ডিডিওএস হামলা চালিয়েছে সাইবার অপরাধীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০২৩ সালের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সাইবার আক্রমণ। এছাড়া স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি নামের সরকারি অ্যাপের কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন সাইবার আক্রমণ চালানো হয়। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে সাইবার হামলার সংখ্যা বেড়ে ৩৩৭-এ পৌঁছেছে, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ১৬৪। এই বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ সাইবার ঝুঁকির শীর্ষ দেশগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

জেবি