বিশেষ প্রতিনিধি: দুর্ধর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দিদের নিরাপদভাবে রাখার জন্য ঢাকায় একটি ‘স্পেশাল কারাগার’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এটি কেরানীগঞ্জের বর্তমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত একটি ভবনে চালু করা হবে।
প্রাথমিকভাবে এই ভবনটি মহিলা কারাগার হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল। তবে কৌশলগত কারণে আপাতত এটি ‘স্পেশাল কারাগার’ হিসেবে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। কারা কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, যা ইতোমধ্যে অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ১৭৬৫ সালে প্রথমবারের মতো সাধারণ বন্দিদের রাখার জন্য ১০টি ওয়ার্ড নির্মিত হয়। ১৭৮৮ সালে সেখানে বড় অপরাধীদেরও রাখা শুরু হয়। পরবর্তীতে, ১৯০২ সালে কারাগারটি ৩৯ একর জমির ওপর বিস্তৃত হয়। ১৯৮০ সালে আশপাশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে কারাগারটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং কেরানীগঞ্জে নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার গড়ে তোলা হয়।
২০১৬ সালে পুরান ঢাকার কারাগার থেকে পুরুষ বন্দিদের কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে, মহিলা বন্দিদের জন্য আলাদা কারাগার নির্মাণ করা হলেও নারী কর্মকর্তা ও কারারক্ষীর অভাবে সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে, এই কারাগারটিই ‘স্পেশাল কারাগার’ হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে প্রয়োজনে কিছু অংশ মহিলা বন্দিদের জন্যও বরাদ্দ রাখা হবে।
উন্নত নিরাপত্তা ও আধুনিক কারাগার ব্যবস্থা
আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন জানিয়েছেন, এই বিশেষ কারাগারটি উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পরিচালিত হবে। এখানে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে এবং প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের দিয়ে এটি পরিচালনা করা হবে।
ঈদুল ফিতরের পর কারাগারটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ বন্দিদের রাখা হবে, বিশেষ করে যারা সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ।
মহিলা বন্দিদের বর্তমান অবস্থা
পুরান ঢাকার কারাগারে মহিলা বন্দিদের জন্য আলাদা ইউনিট ছিল। তবে কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের সময় তাদের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়। কেরানীগঞ্জের মহিলা কারাগার চালু না হওয়ায় এখনো তারা কাশিমপুরেই রয়েছেন।
এই বিশেষ কারাগার দুই বছরের জন্য অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কার্যকারিতা যাচাইয়ের পর এর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।