Logo

মাসকট থেকে ম্যাচ উইনার, ইংল্যান্ডের নতুন নায়ক হয়ে ওঠার গল্প

সাবেক কোচ গ্যারি গ্রাহাম বলেন, 'জোনাথনের বিশেষত্ব ছিল তার নম্রতা। সে জানত না সে কতটা ভালো খেলোয়াড়, আর এটাই তাকে আলাদা করত।'

ছবি: সংগৃহীত

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: ২০১৩ সালে ওয়েম্বলির গ্যালারিতে গর্জন করে উঠেছিল হাজার হাজার দর্শক। ব্রাজিলের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সেই ম্যাচে মাসকট হিসেবে মাঠে নেমেছিল নয় বছর বয়সী এক খুদে, জোনাথন রো। ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের গোলে জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড, রো ছিলেন মাঠের ঠিক মাঝখানে, তার প্রিয় তারকাদের ছুঁয়ে দেখা সেই মুহূর্তে।

১২ বছরের ব্যবধানে সেই খুদেটিই আজ ইংল্যান্ডের হয়ে ইউরো অনূর্ধ্ব-২১ ফাইনালের নায়ক!

মার্সেইর হয়ে খেলা রো অতিরিক্ত সময়ে বদলি হিসেবে নামেন জার্মানির বিপক্ষে ইউরো ফাইনালে। ৯২তম মিনিটে তার দারুণ হেডে জয় নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড, আর দেশবাসীর সামনে নিজেকে প্রমাণ করেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। ম্যাচের পর রো বলেন, 'দলে যে কোনোভাবে অবদান রাখতে চেয়েছিলাম। সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে, কারণ গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানুষ এই ম্যাচটি দেখেছেন।'

এএফসি ওয়েম্বলির সাবেক খেলোয়াড় রো যখন ১১, তখন থেকেই অসুস্থ মায়ের সেবা আর ছোট বোনকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। একই সঙ্গে লন্ডন থেকে তিন ঘণ্টার যাত্রা করে যোগ দিতেন নরউইচ সিটির একাডেমিতে।

তার সাবেক কোচ গ্যারি গ্রাহাম বলেন, 'জোনাথনের বিশেষত্ব ছিল তার নম্রতা। সে জানত না সে কতটা ভালো খেলোয়াড়, আর এটাই তাকে আলাদা করত।'

তরুণ বয়সেই পেয়ে বসে অসগুড-শ্লাটার ডিজিজ—এক ধরনের হাঁটুর সমস্যা। তবে তাতে দমে যাননি তিনি। ২০২১ সালে প্রথমবার নরউইচের মূল দলে জায়গা পান। ২০২৩-২৪ মৌসুমে নরউইচকে চ্যাম্পিয়নশিপ প্লে-অফ সেমিফাইনালে তুলতে বড় অবদান রাখেন, গোল করেন ১৩টি।

ফ্রান্সের ক্লাব মার্সেই তাকে ঋণ চুক্তিতে নেয়, চুক্তিতে ছিল ১৭ মিলিয়ন পাউন্ডে কিনে নেওয়ার শর্ত। তবে রোকে নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়—নরউইচ কোচ জানান, মৌসুমের প্রথম ম্যাচে খেলার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন রো, কারণ তখনই মার্সেইয়ের প্রস্তাবে আগ্রহী ছিলেন তিনি।

লিগে মাত্র ৬ ম্যাচে প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছেন। বাকি ২২ ম্যাচেই নেমেছেন বদলি হিসেবে। নিজেই স্বীকার করেন, 'নরউইচে নিয়মিত খেলতাম। মার্সেইতে এসে পারফর্ম করার যে প্রত্যাশা, তা মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল।'

জার্মানিকে হারিয়ে ফের ইউরোপ সেরা ইংল্যান্ডজার্মানিকে হারিয়ে ফের ইউরোপ সেরা ইংল্যান্ড

কিন্তু রো দমে যাননি। তিনি আরও বলেন, 'অনেক সময় হতাশ লাগত, কিন্তু আমি জানতাম আমাদের একটা দলীয় লক্ষ্য আছে। আমি যতটা সম্ভব তা পূরণে চেষ্টা করে গেছি।'

ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ কোচ লি কার্সলি বলেন, 'আমরা জানি খেলোয়াড়রা ক্লাবে খেলুক বা না খেলুক, আমরা তাদের খোঁজ রাখি। রো এক ভিন্ন ধাঁচের খেলোয়াড়—বিদেশে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করা সহজ নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'সে দলেই আসবে কিনা তা নিয়ে হয়তো সন্দেহে ছিল। কিন্তু তার কাজের প্রতি নিষ্ঠা, হোটেলে ও ট্রেনিংয়ে তার ইতিবাচক মনোভাব, সব মিলিয়ে দারুণ প্রভাব ফেলেছে।'

সেই প্রভাবই মাঠে গিয়েও পড়েছে—সর্বশেষ মিনিটে গোল করে দেশকে এনে দিয়েছেন শিরোপা। এক সময়ের মাসকট আজ সত্যিকারের নায়ক।

বাংলাফ্লো/এসও

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0