Logo

মাতৃভাষা দিবসের রূপকার রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙচুর

কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে নির্মিত শহীদ মিনার ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।

ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রতিনিধি

কুমিল্লা: কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে নির্মিত শহীদ মিনার ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (২৫ জুন) ম্যুরাল ও শহীদ মিনারের ভাঙা ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লেও ঠিক কখন এসব ভাঙচুর হয়েছে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং সমালোচনা শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সরেজমিনে দেখা গেছে, শহীদ মিনারের মধ্যখানে লাল সূর্য থাকলেও তিনটি স্তম্ভের একটিও অবশিষ্ট নেই। পাশের কাচের ওপর তৈরি রফিকুল ইসলামের ম্যুরালটিও ভাঙা। স্থানীয়রা জানান, কয়েক মাস ধরেই শহীদ মিনার ও ম্যুরালটি ভাঙা অবস্থায় রয়েছে।

একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের ধারণা, মাদকাসক্ত ছিন্নমূলেরা লোহা ও স্টিল দিয়ে তৈরি স্তম্ভগুলো ভেঙে নিয়ে গেছে। ম্যুরালটি সম্ভবত ৫ আগস্টের পর কোনো এক সময় ভাঙা হয়েছে।

একজন শিক্ষক জানান, দীর্ঘদিন ধরে এসব ভাঙা অবস্থায় থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি সামনে আসে।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শফিউল আহমেদ বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা ও ভাষার সংগ্রামকে সম্মান করে, তারা এমন নিকৃষ্ট কাজ করতে পারে না। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দ্রুত শহীদ মিনার ও ম্যুরাল পুনর্নির্মাণ করতে হবে। দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, “ম্যুরাল ও শহীদ মিনার ভাঙার বিষয়টি জেনেছি। তবে কখন বা কারা এগুলো ভেঙেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং দোষীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।”

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের কার্যক্রম শুরু হলে সাথে একটি শহীদ মিনার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। ম্যুরালটি স্থাপিত স্থানের পাশেই রয়েছে রফিকুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়রা সেখানে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছিলেন।

১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে চিঠি লিখে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির প্রস্তাব দেন। তিনি তাঁর সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে নিয়ে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে পালিত হয়ে আসছে। এ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাঁদের সংগঠন একুশে পদক লাভ করে। রফিকুল ইসলাম ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর কানাডার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলাফ্লো/এসকে

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0