স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা: পাচার, আর্থিক অস্বচ্ছতা, বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোয় স্বজনপ্রীতি, সরকারি সফরে নিজের স্ত্রীকে ভ্রমণসঙ্গী করা এবং প্যারালিম্পিক কমিটির অফিস অন্য প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া—এমন নানা অভিযোগ উঠেছে প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের (এনপিসি) সাবেক মহসচিব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে।
গত ২৮ মে নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা হয়। মাকসুদ সরতেই একে একে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাকসুদের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছেন প্রকৃত প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদরা।
২০০৭ সাল থেকেই প্যারালিম্পিক কমিটির নানা পদে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯ সালে প্রয়াত প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদ শাহান উদ্দিনের কাছ থেকে একপ্রকার জবর-দখল করে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে মহাসচিব পদে আসিন হন তিনি। ২০২২ সালে নির্বাচিত কমিটিতে আসেন মাকসুদ।
অভিযোগ রয়েছে, এই সময়কালের মধ্যে এনপিসিতে ঘটেছে তুঘলকিকাণ্ড। অভিযোগে জানা যায়, মাকসুদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই ২০২৩ সালে এনপিসির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন ভেলরি টেলর। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে কখনো সেরা হতে না পারলেও শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে টেবিল টেনিস খেলোয়াড় নুর নাহিয়ানকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চেক প্রজাতন্ত্রে পাঠিয়েছিলেন মাকসুদ।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরোনো ভবনে রয়েছে এনপিসির অফিস। বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড নামক একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়ে সেই অফিস ব্যবহার করেছেন।
অভিযোগে আরও জানা যায়, প্রত্যেক অডিটে কাউকে কিছু না জানিয়েই নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অডিট পাশ করাতেন মাকসুদুর রহমান। ২০২৩ সালে চীনের হাংজুতে এশিয়ান প্যারা গেমসে অনৈতিকভাবে স্ত্রী তাহমিনা মাকসুদকে টেকনিক্যাল অফিশিয়াল হিসাবে নিয়ে যান তিনি।
অভিযোগে আরও জানা যায়, ঢাকায় ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলতে আসা খেলোয়াড়দের তিনি এতিমখানায় রেখে দেশের সম্মানহানি করেছেন। এছাড়াও নির্দিষ্ট ফেডারেশন থাকা সত্ত্বেও প্যারা আরচারি, প্যারা ব্যাডমিন্টন, প্যারা টেবিল টেনিসসহ অনেক বিতর্কিত সংগঠন শুধু নিজের স্বার্থে তৈরি করেন মাকসুদ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়োজিত জাতীয় হুইলচেয়ার ক্রিকেট পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, তার অব্যবস্থাপনার কারণে শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টটি বাতিল করতে বাধ্য হয় বিসিবি। অর্থ নিয়েও ক্রীড়াবিদদের বিদেশে না পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে। সবশেষ গত বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত প্যারালিম্পিক গেমসে দুজন প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদের সঙ্গে ১৪ জন কর্মকর্তা পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন মাকসুদ। যা ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। পরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের হস্তক্ষেপে এনপিসি অঙ্গন শান্ত হয়।
ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফ আহমেদ মৃদুল বলেন, ‘গত ১৭ বছরে এনপিসিতে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান। দেশের সম্মানহানিও হয়েছে ব্যাপক। এখন তিনি এই কমিটির বিরুদ্ধে রিটও করেছেন।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সব মিথ্যা ও বানোয়াট। এনপিসি আন্তর্জাতিক প্যারালিম্পিক কমিটির অন্তর্ভুক্ত। তাই নির্বাচিত কমিটি ছাড়া তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আদালতে রিট করেছি এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ঘোষিত অ্যাডহক কমিটির উপর স্টে অর্ডারও পেয়েছি।’
বাংলাফ্লো/এসও
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0