Logo

নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে সরকারের সাথে থাকা কঠিন হবে: বিএনপি

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও নির্বাচনের সুষ্পষ্ট রোডম্যাপ, ‘বিতর্কিত’ উপদেষ্টাদের পদত্যাগ নিয়ে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তরফে ইতিবাচক বক্তব্য না আশায় হতাশ বিএনপি।

ছবি সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, নির্বাচনী সুষ্পষ্ট রোডম্যাপ, ‘বিতর্কিত’ উপদেষ্টাদের পদত্যাগ নিয়ে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তরফে ইতিবাচক বক্তব্য না আশায় হতাশ বিএনপি। সেইসঙ্গে আবারও একই ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে দলটি বলেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী এজেন্ডা প্রকাশ না হলে, বিএনপির পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া জানান নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সোমবার(২৬মে) রাতে দলটির স্থায়ী কমিটিও বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানতে এই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।

তিন দিন আগে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি এবং তার পরদিন আরও ২০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “রাজনৈতিক দল সমূহের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোড ম্যাপের ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি।”

“বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোনো সময়েই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি এবং এখনও চায় না। কিন্তু আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোড ম্যাপ দাবি করে এসেছি।”

প্রানর উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘এক কথার মানুষ’ উল্লেখ করে বলে, নির্বাচন প্রশ্নে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত যে সময় দেওয়া হয়েছিল, তার বাইরে কিছুই হবে না।

যে তিনটি দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা সংলাপ করেছে, তাদের মধ্যে কেবল বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়া এবং সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে। জামায়াত বলেছে আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। এনসিপি চেয়েছে, বিচার,সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত পরিকল্পনা। এই দল দুটি আবার ডিসেম্বর থেকে জুনের সময়সীমা নিয়ে আপত্তি জানায়নি।

ওইদিন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, নির্বাচনি সুষ্পষ্ট রোডম্যাপ, ‘বিতর্কিত’ উপদেষ্টাদের পদত্যাগ এবং আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরে বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, “জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্রসম্ভব জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।”

মোশাররফ বলেন, “এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসাবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।”

উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি ‘অস্পষ্ট ও বিব্রতকর’

মোশাররফ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সাথে অনুষ্ঠিত আলোচনায় আমরা উপর্যুক্ত বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছিলাম বরাবরের মতই। আমরা লক্ষ্য করেছি, উক্ত দিনে অর্থাৎ ২৪ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর।”

গত ২২ মে সকালে সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত বিভিন্ন আইডি থেকে ‘নিশ্চিত’ তথ্য বলে ছড়ানো হয় যে, প্রধান উপদেষ্টা সরে যেতে চাইছেন।

পরে সন্ধ্যায় গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে ইউনূসের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে এই গুঞ্জন যে সত্য, তা প্রমাণ হয়।

দুই নেতা সেই বৈঠকে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ করতে। শুরুতে সংবাদমাধ্যমকে দুই পক্ষ থেকেই নাম প্রকাশ না করে বক্তব্য দেওয়া হয়। পরে বিবিসি বাংলায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলামই নিজেই বলেন সব কিছু।

পরে জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের নির্ধারিত বৈঠক শেষে উপদেষ্টারা নিজেরাও এ নিয়ে দীর্ঘ কথা বলেছেন। সেই বৈঠকের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে নানা কিছু এসেছে। কিন্তু কোন বিষয়ে সরকার কাজ করতে পারছে না, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি।

২৪ মে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের উপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সকল কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”

বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে মোশাররফ হোসেন বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা প্রথম থেকে অদ্যাবধি সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতির কারণে এবং দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি-দাওয়া এবং এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন।”

মোশাররফ বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে সরকারের উপর দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে।”

বিএনপি নেতা মোশাররফ বলেন, “দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। জুলাই ছাত্র- গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে অতিশীঘ্র রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা অতি জরুরি। এই লক্ষ্যে আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি।”

“সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোন কর্মকাণ্ডকে আমরা সকল সময়ে নিরুৎসাহিত করি এবং প্রতিরোধ করার অঙ্গীকারবদ্ধ। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে কোন কোন মহল তাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তুলছে মর্মে একটি বিমূর্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।”

সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে জনমনে সংশয়

বিএনপির এই নেতা বলেন, “জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সকল শ্রেণি পেশার শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, যাতে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা যায় সেই জন্য সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে আমরা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামীলিগের পতন ঘটিয়েছে।”

“অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে জনমনে এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।”

এসময় তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে, অথচ সরকার আজ পর্যন্ত তার শপথ গ্রহণের জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

বাংলাফ্লো/এসকে

Leave a Comment

Comments 0