Logo

ইরান আক্রান্ত, তবু কেন নিস্ক্রিয় মিত্রগোষ্ঠী

হিজবুল্লাহ, ইরাকের ইরান-ঘনিষ্ঠ শিয়া মিলিশিয়া এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা—যারা একসঙ্গে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষ নামে পরিচিত, তারা এখনো এ সংঘাতে সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি।

হিজবুল্লাহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ঢাকা: গত দুই বছরে আঞ্চলিক সংঘর্ষে যে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে এই মিত্রগোষ্ঠীগুলো, তা তাদের বর্তমান সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখছে বলে বিশ্লেষকদের মত। তাছাড়া দেশীয় রাজনৈতিক চাপে তারা আপাতত ‘পেছনেই থাকছে’। তবে সব কিছু সত্ত্বেও পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় নেয়ার সম্ভাবনাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না।

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক নজিরবিহীন হামলার পর সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী হামলাও পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলেছে। অথচ, এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমানভাবে নিষ্ক্রিয় রয়েছে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রগোষ্ঠীগুলো। হিজবুল্লাহ, ইরাকের ইরান-ঘনিষ্ঠ শিয়া মিলিশিয়া এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা—যারা একসঙ্গে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষ নামে পরিচিত, তারা এখনো এ সংঘাতে সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি।

বিশ্লেষকদের মতে, গত দুই বছরে আঞ্চলিক সংঘর্ষে যে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে এই মিত্রগোষ্ঠীগুলো, তা তাদের বর্তমান সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া দেশীয় রাজনৈতিক চাপে তারা আপাতত ‘পেছনেই থাকছে’। তবে সব কিছু সত্ত্বেও পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় নেয়ার সম্ভাবনাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না।

১৯৮০-এর দশকে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি দখলের বিরুদ্ধে ইরানের সহায়তায় গঠিত হয় হিজবুল্লাহ। তখন থেকেই প্রতিরোধ অক্ষ নামে পরিচিত ইরানের আঞ্চলিক জোট বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে। এই জোটে হিজবুল্লাহ ছাড়াও আছে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এবং ফিলিস্তিনের হামাস।

একসময় হিজবুল্লাহর কাছে দেড় লাখ ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ১ লাখ যোদ্ধা থাকার দাবি করা হতো। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর হিজবুল্লাহ সীমান্ত থেকে রকেট ছুঁড়তে শুরু করে। সেই উত্তরে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়, যুদ্ধ চরমে পৌঁছায় সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ। ঐ যুদ্ধে হিজবুল্লাহর সাবেক নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন, ধ্বংস হয় তাদের বড় অংশের অস্ত্রভাণ্ডার। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ থামে নভেম্বরের দিকে।

এই বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে, সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে হিজবুল্লাহ এখনো সরাসরি জড়ায়নি। দলটি এক বিবৃতিতে ‘ইসরায়েলি-আমেরিকান আগ্রাসনের’ নিন্দা করেছে এবং ‘প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ’ নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। কিন্তু এখনো আক্রমণে যায়নি।

হিজবুল্লাহকে যুদ্ধ এড়ানোর ব্যাপারে লেবাননের সরকারেরও ভূমিকা আছে। সম্প্রতি লেবানন সফর করা যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম ব্যারাক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হিজবুল্লাহ সংঘাতে জড়ালে তা হবে খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত। লেবাননের সরকার ও জনগণের মধ্যেও তাই নতুন সংঘাতের বিরুদ্ধে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইরাকে ইরানঘনিষ্ঠ কয়েকটি শক্তিশালী শিয়া মিলিশিয়া রয়েছে, যাদের অনেকে এখন দেশটির সরকারি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশ। এর মধ্যে কাতাইব হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে হুমকি দিয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে জড়ালে তারা মার্কিন আঞ্চলিক ঘাঁটিতে হামলা চালাবে। কিন্তু ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ইরান হামলার পর থেকে তারাও নীরব। চ্যাথাম হাউসের গবেষক রেনাদ মানসুরের মতে, এই মিলিশিয়াগুলো বর্তমানে ইরাকের রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত, তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হচ্ছে। কাজেই তারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে লাভবান হবে না, বরং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

হুতিরাও একইভাবে নিস্ক্রিয়। কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করে তারা লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজে হামলা বন্ধ করেছিল। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হামলা বন্ধ করে। তবে হুতি বিদ্রোহীরা হুমকি দিয়েছিল—ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে আমেরিকা সম্পৃক্ত হলে তারা আবার হামলা শুরু করতে পারে।

রবিবার ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর হুতিদের রাজনৈতিক ব্যুরো একে ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি’ বললেও, কোনো সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

লন্ডনের কিংস কলেজের সামরিক বিশ্লেষক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ জানান, হিজবুল্লাহ কৌশলগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, এবং সিরিয়ার ভেতরে অস্ত্র সরবরাহের পথও এখন বন্ধ।

তবে লেবাননের বিশ্লেষক কাসেম কাসিরের মতে, “এই যুদ্ধের মাত্র শুরু। এখনো ইরান সরাসরি মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত করেনি, শুধু ইসরায়েলকে টার্গেট করেছে।” তিনি আরও বলেন, হুথি ও ইরাকি মিলিশিয়ারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেই গভীর পাল্টা আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে না, যা একসময় হিজবুল্লাহর ছিল।

জার্মান থিংকট্যাঙ্ক সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড রিসার্চ ইন পার্টনারশিপ উইথ দ্য ওরিয়েন্ট-এর গবেষক তামার বাদাওয়ি বলেন, “ইরান এখন চায়, এই গোষ্ঠীগুলো অক্ষুণ্ন থাকুক ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকুক।” তবে তিনি সতর্ক করে দেন, ইরান চূড়ান্ত ক্ষতির মুখে পড়লে বা সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির ওপর হামলা হয়, তবে পরিস্থিতি একেবারে বদলে যেতে পারে।

বাংলাফ্লো/আফি

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0