আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঢাকা: ইরানে এখনও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অন্যান্য বিশ্বনেতারা ইরানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান আরও কঠোর করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার বিষয়টি বিবেচনা করছে। ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আল খামেনিকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ওই নেতার অবস্থান সম্পর্কে তিনি জানেন। তাকে ‘সহজ লক্ষ্যবস্তু’ হিসাবেও উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন।
এমনকি জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোও তাদের বক্তব্যে কঠোরতা এনেছে। এসব দেশ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রশ্ন হলো, এই ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ইরান কি একা পড়ে গেছে? না কি এমন কোনও মিত্র আছে, যারা প্রয়োজনে তার পাশে দাঁড়াতে পারে।
ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে
দশকের পর দশক ধরে ইরানের নেতারা মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক মিত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইরান আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করে শাসনব্যবস্থা রক্ষার কৌশল গড়ে তোলে। কিন্তু আজ যখন ইসলামী শাসনব্যবস্থা টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন এই মিত্রগোষ্ঠীগুলোর খবর নেই।
লেবাননের হিজবুল্লাহ এক সময় ইরানের ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধের অক্ষের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ হিসাবে বিবেচিত হতো। কিন্তু ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলা শুরু করার পর এই গোষ্ঠী একটি ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়েনি।
গত এক বছরে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা ও নেতৃত্ব প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসও ২০ মাসের যুদ্ধের পর এখন আর আগের মতো শক্তিশালী নেই। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও নেতারা নিহত হওয়ায় তারা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ইরাকে ইরানপন্থী শিয়া মিলিশিয়ারা অতীতের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা চালায়নি।
ইয়েমেনের হুতি মিলিশিয়া গত রবিবার ইসরায়েলের দিকে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লেও তারপর থেকে চুপ রয়েছে।
এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধগুলো ইরানের মিত্রদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিরুৎসাহিত করেছে। কারণ ইসরায়েল অত্যন্ত উন্নত সামরিক শক্তি ও গোয়েন্দা সক্ষমতা রাখে।
এই প্রেক্ষাপটে এই গোষ্ঠীগুলো এখন নিজেদের স্বার্থের দিকেই নজর দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইরাকের অনেক মিলিশিয়া সদস্য এখন তেলের ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করছেন। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ নিজেরা পুনর্গঠনে ব্যস্ত এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের সময় তেহরানের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ।
আরব কূটনীতিকদের মতে, যারা নিয়মিত হিজবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তারা জানান—এই সব মিলিশিয়া গোষ্ঠীর কাছে এখন প্রধান বিষয় হলো নিজেদের টিকে থাকা।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ও ইরাক ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প পরিচালক রেনাদ মানসুর বলেন, “এই পুরো নেটওয়ার্কগুলোর জন্য এখন বিষয়টা হচ্ছে, কেবল টিকে থাকা। তারা সবাই জানে, এই ধরনের সামরিক অভিযানের ভয়াবহতা কতটা ভয়ঙ্কর।”
এই আত্মরক্ষামূলক অবস্থান ইরানের মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব কমে যাওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফল। এর চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় গত ১৩ জুন ইসরায়েলের বিমান হামলায়।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হন জেনারেল কাসেম সুলাইমানি। তাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির পর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হতো। তিনি ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মিত্রদের প্রধান সমন্বয়কারী।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত ও ২৫০ জনকে জিম্মি করার পর থেকে ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। এরপর থেকে হামাস ও হিজবুল্লাহর ওপর ধারাবাহিকভাবে আঘাত হানতে থাকে ইসরায়েল। এই লড়াইয়ে ইরান মিত্রদের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যত নিষ্ক্রিয় থেকেছে।
ওই বছরের শেষের দিকে ও ২০২৪ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কমান্ডাররা নিহত হন। এতে সিরিয়ায় ইরানের সামরিক নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়। এরপর ইরান ইরাকের মিত্র মিলিশিয়াদের ব্যবহার না করে সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে নিজের বাহিনী গুটিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় এক দশকের ইরানি প্রভাবের সমাপ্তি ঘটে।
চ্যাথাম হাউসের মানসুর বলেন, “এই গোষ্ঠীগুলোর অনেকেই এখন ভাবছে, এটা কি প্রতিরোধ দেখানোর সময়, না কি মাথা নিচু করে থাকা ও সংঘাত এড়ানোর সময়?”
ইসরায়েলের হামলাগুলো তেহরানকে শুধু দুর্বল করার পাশাপাশি অপমানিতও করেছে। এই হামলায় পারমাণবিক স্থাপনা, অস্ত্র ব্যবস্থা, জ্বালানি ও তেল অবকাঠামো এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নেতারা লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। তবে ইরানের মিত্রদের সবচেয়ে বেশি হতবাক করেছে—ইসরায়েলের গোয়েন্দা তৎপরতার গভীরতা।
ইরানের ভেতর থেকেই ইসরায়েল ড্রোন হামলা চালাতে পেরেছে। তারা তেহরানের বহু শীর্ষ সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তার অবস্থান সম্পর্কেও আগে থেকেই জানত।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গারটন কলেজের অধ্যক্ষ ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ কেনডাল বলেন, “আমি ধারণা করছি, হুতিদের কাছে এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর ছিল—কীভাবে ইরানের ভেতর এত গভীরভাবে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো হয়েছে। তারা হয়তো এখন ভাবছে, আমাদের কিছুটা নিচু হয়ে থাকতে হবে। আমরা নড়াচড়া শুরু করলে আমাদের অবস্থান ফাঁস হয়ে যেতে পারে।”
ইরাকে এখন শিয়া মিলিশিয়াদের নেতারা প্রযুক্তি ব্যবহারে খুব সতর্ক। তারা বার্নার ফোন ব্যবহার করেন এবং নিয়মিত নম্বর পরিবর্তন করেন। তারা অনলাইনে থাকেন খুব কম।
মানসুর বলেন, “তারা সবাই ইসরায়েলের ভয়ে আছে।”
হিজবুল্লাহ প্রকাশ্যে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছে, ইরান নিজে এই সংঘাত সামাল দিতে পারবে, মিত্রদের সহায়তা ছাড়াও। এই গোষ্ঠী এখন পর্যবেক্ষণ করছে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়।
আরব কূটনীতিকদের মতে, হিজবুল্লাহ এখন আর নতুন কোনও যুদ্ধে জড়াতে চায় না। তারা বর্তমানে তাদের সামরিক সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠনে মনোযোগ দিচ্ছে।
এছাড়াও হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক নিয়ে কিছু অস্বস্তি এখনও রয়ে গেছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের সময় তারা যে পর্যাপ্ত সহায়তা পায়নি, তা নিয়ে ক্ষোভ আছে।
ইসরায়েল হামলার আগের দিন হিজবুল্লাহ নেতা নাইম কাসেম একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নিজেকে একজন লেবাননি রাজনীতিক হিসাবে পরিচয় দেন। তার কার্যালয়ে কোনও ইরানি পতাকা বা খামেনির ছবি দেখা যায়নি। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, হিজবুল্লাহ তাদের লেবাননি পরিচয়কে সামনে আনছে এবং ইরানের প্রভাব থেকে কিছুটা সরে আসছে।
ইসরায়েল যখন হিজবুল্লাহ সদস্যদের মোবাইল পেজার সিস্টেম ধ্বংস করে তাদের নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে, তখন গোষ্ঠীর অনেকেই মনে করে, ইরান তাদের রক্ষা করতে কিছুই করেনি। কূটনীতিকরা জানান, হিজবুল্লাহর কিছু নেতা এই গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য আংশিকভাবে ইসলামি বিপ্লবী গার্ডকেই দায়ী করেন।
ইরাকে ইরানপন্থী শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সংখ্যা ডজনখানেক। সেখান থেকে কেবল একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। কাতাইব হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে ইরানের তাদের সামরিক সহায়তার প্রয়োজন নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ালে তারা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত হানবে।
আরব কূটনীতিকদের মতে, ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-সুদানি মিলিশিয়া নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন যাতে তারা এই সংঘাতে না জড়ায় এবং উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য না দেন।
এছাড়া ইরাকের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর মনোযোগ এখন ভিন্ন দিকে। অনেক মিলিশিয়া নেতা এখন সরকারি পদে আছেন। ফলে তারা সরকারি চুক্তি ও ইরাকের লাভজনক তেল খাতে প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এখনও তারা ইরানের প্রতি অনুগত হরেও তাদের সিদ্ধান্ত এখন অনেকটাই স্বার্থনির্ভর।
মানসুর বলেন, “তারা ইরাকের স্থিতিশীলতা ও তেলের উচ্চমূল্যের সুযোগ নিয়ে নিজেদের জন্য অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।”
হুতিরা প্রকাশ্যে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য এবং ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নিপাত যাক’—এই ধরনের স্লোগান দেয়, তা সত্ত্বেও তারা কখনও পুরোপুরি ইরানের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল না।
গত মার্চ ও এপ্রিলে টানা কয়েক সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার কারণে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন অস্ত্রভাণ্ডার অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ কেনডাল বলেন, “হুতিরা আগে নিজেদের কথা ভাবে। এটা একধরনের ‘হুতি-প্রথম’ নীতি। তারা নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার জন্য যুদ্ধ করবে না। তারা যা তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো, সেটাই করবে।”
অন্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, হুতিরা এখনও যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছে। তারা হয়তো ইচ্ছে করে পেছনে রয়েছে। কারণ তেহরান এখন কূটনৈতিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সঙ্কট দলের ইয়েমেনবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক আহমেদ নাগি বলেন, “হুতির এখনও ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে রয়েছে। তারা ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে সীমিতভাবে অংশ নিচ্ছে। আর এটা সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিত পদক্ষেপ।”
তবে কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের ওপর ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে বোমা হামলা শুরু করে, তাহলে ইরানের কিছু মিত্রগোষ্ঠীর এই হিসাব-নিকাশ বদলে যেতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি যুদ্ধ শুরু করলে তা মুসলিম বিশ্বজুড়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ, সহিংস প্রতিক্রিয়া ও ইরানের প্রতি সংহতি তৈরি করবে—এমনটা প্রায় নিশ্চিত।
ইরানের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মিত্রদের অবস্থান
মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পাকিস্তান—একমাত্র ইসলামি দেশ, যার কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি গাজায় ইসরায়েলের হামলা মোকাবেলায় পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করছেন।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের গুরুত্ব বোঝাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি ইরানের ওপর সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে চিন্তা করছেন।
পাকিস্তানের নেতারাও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ‘ইসরায়েলের বিনা উস্কানির আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে ইরানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরায়েল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু করার আগে ‘বহুবার চিন্তা করবে।’
এই বক্তব্যগুলো দৃঢ় অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। তবে এতে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের প্রতিশ্রুতি নেই।
তবে পাকিস্তান একইসঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করছে। দেশটি অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র এবং তাদের কৌশলগত মিত্র চীনকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা কূটনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করে এবং এই সহিংসতা একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আগেই যেন তা থামানো যায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান পূর্ববর্তী শত্রু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব ও মিশরের মতো দেশ।
এই পরিবর্তনের ফলে ইরান আঞ্চলিক পর্যায়ে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। প্রায় দুই ডজন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ একত্রে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্কের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে ইরানকে সরাসরি সহায়তা দেওয়া সম্ভাবনা কম। কারণ এসব দেশের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় মিত্রতা রয়েছে।
ইরানের প্রধান বৈশ্বিক মিত্র রাশিয়া ও চীনও ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এর আগে তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তেহরানকে শাস্তিমূলক প্রস্তাব থেকে রক্ষা করেছে।
তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনও ইঙ্গিত নেই যে, এই দেশগুলো ইরানকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেবে অথবা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াবে।
পরিস্থিতি আরও জটিল হলে ও যুক্তরাষ্ট্র খোলাখুলিভাবে ইরানে সরকার পরিবর্তনের কৌশল গ্রহণ করলে এই চিত্র পাল্টে যেতে পারে। রাশিয়া ও চীনের উভয়েরই ইরানের স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত স্বার্থ রয়েছে। ইরানের দীর্ঘদিনের “লুক ইস্ট” বা “পূর্বমুখী” কৌশল এবং দেশটির অস্থিরতা থেকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাব—এসব কারণে ইরানের স্থিতিশীলতা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
তবুও বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রাশিয়া ও চীন সরাসরি সংঘাতে জড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম।
সিরিয়ার আসাদ সরকার ছিল রাশিয়ার আঞ্চলিক ঘনিষ্ঠ মিত্র। আসাদের পতনের সময়ও মস্কো সরাসরি কিছু করেনি। বর্তমানে তারা ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী বলেও দেখা যাচ্ছে।
চীন ইরানের পক্ষে বিবৃদতি দিলেও ইতিহাস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে সরাসরি জড়াতে তারা খুব কমই আগ্রহ দেখায়।
বাংলাফ্লো/এসকে
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0